বর্ষার আকাশে কালো মেঘ। দূরে যমুনার বুকে ঢেউ খেলছে। তারই তীরে শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরীতে জমে উঠেছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ডিঙি নৌকার হাট। ছোট-বড় সারি সারি ডিঙি নৌকা সাজানো—মনে হবে এক রঙিন নৌকার মেলা বসেছে। ক্রেতা-বিক্রেতার কোলাহল, দরদাম আর বৈঠার শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে যমুনা পাড়ের এই জনপদ।
শাহজাদপুরে বর্ষা মৌসুমের প্রতি শুক্রবার বসে এই নৌকার হাট। দূর-দূরান্ত থেকে নদীপথ ও সড়কপথে আসে শতাধিক নৌকা। স্থানীয় কারিগররা জানান, সারা বছর তারা অন্য পেশায় থাকলেও বর্ষার সময়টাতেই মূলত নৌকা তৈরি করেন। চার মাস ধরেই তাদের এ ব্যস্ততা থাকে।
একজন বিক্রেতা জানালেন,“বর্ষা শুরু হলে নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। আমরা তখন দিন-রাত নৌকা বানিয়েই কাটাই।”
কৈজুরী হাটে আসা ক্রেতা আজমত আলীর চোখে নস্টালজিয়া। “ছোটবেলায় দাদার সঙ্গে নৌকা কিনতে আসতাম। তখন ৪০০–৫০০ টাকা দিয়ে বড় নৌকা কিনে বৈঠা দিয়ে বাড়ি যেতাম। এখন সে আনন্দ নেই, নৌকা নিয়ে যেতে হয় ভ্যানগাড়িতে করে।”
এই হাটের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন প্রেমলাল চন্দ্র সুত্রধরের মতো বহু কারিগর। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি নৌকা বানাচ্ছেন। তার ভাষায়, “এখন যারা নৌকা কিনছে, তারা শুধু নদী বা বন্যায় পারাপারের জন্য নিচ্ছে। বন্যার পানি বাড়লেই বিক্রি বেড়ে যায়।”
একসময় এই অঞ্চলে কোষা, বজরা, গয়না নৌকা আর বড় বড় পণ্যবাহী নৌকা চলত। কিন্তু রাস্তা-ঘাট তৈরি হওয়ায় সেসব নৌকার বিলুপ্তি ঘটেছে। তবু ডিঙি নৌকার হাট টিকে আছে কালের সাক্ষী হয়ে।
শাহজাদপুরের বেশিরভাগ গ্রাম বর্ষায় প্লাবিত থাকে। তখন নৌকা ছাড়া চলাফেরা করা যায় না। তাই বর্ষার আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই জমে ওঠে এই হাট। যদিও আগের মতো জৌলুস নেই, তবু কৈজুরীর ডিঙি নৌকার হাট এখনও নদীপাড়ের মানুষের ভরসা আর গ্রামীণ জীবনের এক অনন্য ঐতিহ্য।